লাইলাতুল কদরের নিয়ত - শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
আপনারা কি লাইলাতুল কদরের নিয়ত, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত ও লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো সে সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। আজকে আমরা আলোচনা করব শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, লাইলাতুল কদরের নিয়ত ও লাইলাতুল কদরের দোয়া বা লাইলাতুল কদরের সূরা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ লাইলাতুল কদরের নিয়ত - শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
- লাইলাতুল কদরের নিয়ত
- শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
- লাইলাতুল কদরের দোয়া
- লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো
- লাইলাতুল কদরের সূরা
- শেষ কথাঃ লাইলাতুল কদরের নিয়ত - শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
লাইলাতুল কদরের নিয়ত
ইসলামের নিয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সেটা ছোট কাজই হোক বা বড় কাজ। প্রত্যেক কাজের জন্যই বিশুদ্ধ নিয়ত হতে হবে। নিয়ত হচ্ছে আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে সংকল্প, মনের ইচ্ছা বা প্রতিজ্ঞা। এটা হচ্ছে অন্তরের কাজ, জিহ্বার সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য কোন কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয়ে থাকে, সেটাকেই বলা হয়ে থাকে নিয়ত।
আরো পড়ুনঃ যাকাত দেওয়ার নিয়ম ও ফজিলত
অনেকে আরবীতে কিংবা বাংলা উচ্চারণ করেও লাইলাতুল কদরের নিয়ত করেন। বাংলায় যেমন-হে আল্লাহ, কেবলামুখী হয়ে আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ পড়বার জন্য নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবার। আর আরবিতে-নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই সালাতিল লাইলাতুল কাদরী নফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারিফাতিহ-আল্লাহু আকবার।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
লাইলাতুল কদরের নামাজ বা শবে কদরের নামাজ কত রাকাত তার কোন নির্দিষ্ট নাই। সেজন্য শবে কদরের জন্য আপনারা যত খুশি ততই নফল নামাজ পড়তে পারবেন। তবে দুই রাকাত করে শবে কদরের নফল নামাজ গুলো আদায় করতে হবে। এবং এই নামাজ গুলো যত সুন্দর করে পড়া যাবে তত বেশি সওয়াব লাভ করা যাবে।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে শবে কদরের নামাজ কত রাকাত? কিন্তু শবে কদরের নামাজের জন্য বিশেষ কোনো উঠানে নির্দিষ্ট রাকাত নাই। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যত খুশি ততো আপনি নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন। সুতরাং শবে কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নাই। তবে নামাজ পড়ার সময় দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করা লাগবে।
লাইলাতুল কদরের দোয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, যদি আমি লাইলাতুল কদর কোনটা সেটা জানতে পারি, তাহলে সে রাতে আমি কি বলবো? রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, তুমি বলবে-
আরবি উচ্চারণঃ اللهم انك عفو تحب العفا فافو اني
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।
অর্থঃ হে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন! আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল। আপনার ক্ষমা করে দেয়াটা পছন্দ। অর্থাৎ আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। (সুনানে তিরমিজিঃ ৩৫১৩)।
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের করণীয় 05টি কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
সুতরাং এই দোয়াটি সারাদিন রাত বেশি বেশি করে করবেন। হাঁটাচলা শোয়া অবস্থাতেও এ দোয়াটি করা যায়। শেষ দশকে বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়া উচিত। এছাড়া নিচে কিছু লাইলাতুল কদরের দোয়া দেওয়া হলো-
আরবি উচ্চারণঃ سلام هي حتمت ليل فجر
বাংলা উচ্চারণঃ শালা মন হিয়া হাত্তা-মাত লা'ইল ফাজর।
অর্থঃ এটা হচ্ছে নিরাপত্তা, যা ফজরের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
আরবি উচ্চারণঃ تنزلوا الملائكه والروح فيها بيزني ربهم من كل امر
বাংলা উচ্চারণঃ তানাজ্জালুল মালাইকাতুহু ওয়ার রুহু ফি হা বিইযনি রাব্বি হিম মিন কুল্লি আমর।
অর্থঃ এতে প্রতিটা কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয়ে থাকে তাদের পালনকর্তার নির্দেশে।
আরবি উচ্চারণঃ ليله القدر خير من الف شهر
বাংলা উচ্চারণঃ লাইলাতুল কাদরী খাইরুম মিন আলফি শাহর।
অর্থঃ শবে কদর হচ্ছে এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
আরবি উচ্চারণঃ وما ادراك ما ليله القدر
বাংলা উচ্চারণঃ ওয়াামা আদরা কা-মা-লাইলাতুল কদর।
অর্থঃ আপনি শবে কদর সম্বন্ধে জানেন কি?
আরবি উচ্চারণঃ ان الجل هو في ليله القدر
বাংলা উচ্চারণঃ ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতুল কদর।
অর্থঃ শবে কদরে আমি একে নাজিল করেছি।
অন্যান্য যেকোনো রাতের চাইতে এই রাতের ফজিলত অনেক অনেক গুণ বেশি। তাই বলা হয়ে থাকে, এই রাত হাজার রাতের অপেক্ষা উত্তম। এই রাতে নফল নামাজ যত বেশি আদায় করবে তত বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে।
লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো
লাইলাতুল কদর নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে যে লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো বা লাইলাতুল কদরের নিয়ত কি এগুলো বিষয়ে। তাই আজকে আমরা নিয়ে আসলাম লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো তার নিয়ম কানুন। চলুন তাহলে দেখে আসি শবে কদরের নামাজের নিয়ম গুলো।
নামাজ পড়ার সময় প্রত্যেক ব্যক্তিকে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়তে হয়। শবে কদরের নামাজ পড়বার জন্য আপনাকে একটু বেশি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এবং সেই সাথে সঠিকভাবে উচ্চারণ করে দোয়া সমূহ পড়তে হবে। এভাবে দুই রাকাত করে যত খুশি নফল নামাজ আপনি আদায় করতে পারবেন। লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ পড়ার জন্য নিয়ম গুলো নিচে দেয়া হলো-
- প্রথমে সঠিক নিয়মে অজু করে কেবলামুখী ভাবে দাঁড়াতে হবে।
- দুই রাকাত শবে কদরের জন্য নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার ক্ষেত্রে মনে মনে আপনারা ইচ্ছা পোষণ করতে পারবেন কিংবা আরবিতে উচ্চারণ করে নিয়াত বলতে পারবেন।
- আল্লাহু আকবার বলে সানা পাঠ করবেন।
- এরপর সূরা ফাতিহা বলে এর সাথে কুরআনের কোন আয়াত কিংবা যে কোন একটা সূরা যুক্ত করে পড়তে পারেন।
- এরকম ভাবে সাধারণ নামাজের মতই সুরা পাঠ করার পর রুকু ও সিজদা দেয়া লাগবে।
- এরপর প্রথম রাকাতের মত করে দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করার পর তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিতে হবে।
- সালাম ফেরানো হয়ে গেলে আপনারা জিকির করে বা সরাসরি মোনাজাত ধরতে পারবেন। আপনারা মোনাজাত ধরার পরে ও জিকির করতে পারেন।
লাইলাতুল কদরের সূরা
লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার বছর রাতের চাইতেও উত্তম। আমরা এখন লাইলাতুল কদরের সূরা কোনটি সে সম্পর্কে জানব। লাইলাতুল কদরের সূরা নিচে দেয়া হলো-
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতুল কদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর তানাযযালুল মালাইকাতু অররূহ ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাত্তামাত্ব লাই'ল ফাজ্বর।
আরো পড়ুনঃ রক্ত দিলে কি রোজা ভেঙ্গে যায় কি না জেনে নিন বিস্তারিত
অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুনাময় ও অতি দয়ালু।
নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে এটা (কুরআন শরীফ) নাযিল করেছি। আর আপনি জানেন কি, এই মহিমান্বিত রাত কি? মহিমান্বিত রাত অর্থাৎ কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রতিটা বরকতপূর্ণ বিষয় নিয়ে জিব্রাইল আঃ ও ফেরেশতা দুনিয়াতে অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশ অনুযায়ী। সে রাতে ফজর পর্যন্ত সম্পূর্ণ শান্তি বিরাজিত থাকে।
শেষ কথাঃ লাইলাতুল কদরের নিয়ত - শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
লাইলাতুল কদরের নিয়ত এবং শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। লাইলাতুল কদরের নিয়ত এবং শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
আজ আর নয়, লাইলাতুল কদরের নিয়ত এবং শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই লাইলাতুল কদরের নিয়ত এবং শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬
