বুক জ্বালাপোড়া করে কেন

আপনারা কি বুক জ্বালাপোড়া করে কেন বা বুক জ্বালাপোড়া করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই বুক জ্বালাপোড়া করে কেন পোস্টটি আপনাদের জন্য। বুক জ্বালাপোড়া হচ্ছে শারীরিক সমস্যার মধ্যে একটা বড় সমস্যা। বুক জ্বালাপড়ায় ভোগেন নিয়ে এমন মানুষ খুব কমই দেখা যায়। আজকে আমরা আলোচনা করব বুক জ্বালাপোড়া করে কেন সে সম্পর্কে।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই, বুক জ্বালাপোড়া করে কেন সে সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ বুক জ্বালাপোড়া করে কেন

বুক জ্বালাপোড়া কি

বুক জ্বালাপোড়া হলো বুকের ভেতরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত জ্বালা-যন্ত্রণা করার এক অনুভূতি। কখনো কখনো এই জ্বালা শুধুমাত্র বুকে আবার কখনো কখনো গলায় স্থানান্তরিত হতে পারে। জ্বালার সাথে সাথে মাঝে মধ্যে ব্যথা ও হতে পারে। কিন্তু এই বুক জ্বালাপোড়া করলে তাৎক্ষণিক ভাবে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আমাদের সে বিষয়ে অনেকেরই জানা নাই। কারো যদি বুক জ্বালাপোড়া করে, গলার ভেতর জ্বলনি শুরু হয় বা বা গলার ভেতরের দিকে টক ঝাল ও লবণাক্ত কোন প্রকার তরলের অস্তিত্ব অনুভূত হয়ে থাকে, সেই সাথে ঢেকুর উঠে তাহলে ধরে নেয়া যায় যে গ্যাসের সমস্যা থেকে এগুলো তৈরি হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ যে ৬টি কারণে মাসিক দেরিতে হয়

আর যদি বুকের জ্বালাপোড়া খুব বেশি হয়ে থাকে, পাশাপাশি এ ধরনের অস্বস্তিকর ব্যথা বুক থেকে বহু এবং কাঁধের দিকে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে হৃদ যন্ত্রের কোন ধরনের সমস্যার কারণে হয়েছে কিনা সেটা মাথায় রাখা এবং জরুরী ভিত্তিতে ও বিশেষজ্ঞের কাছে দ্রুত যেতে হবে। অনেকেই হঠাৎ বুক ব্যথা হলেই এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিয়ে থাকে। কিন্তু অনিয়ম হৃৎস্পন্দন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ু নালীর সমস্যা, কিডনি রোগ কিংবা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কোন ধরনের লক্ষণ রয়েছে কিনা সেই ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ না নিয়ে অ্যান্টাসিড সেবন করা উচিত নয়।

বুক জ্বালাপোড়া করে কেন

 আজকে আমরা বুক জ্বালাপোড়া কি বা বুক জ্বালাপোড়া করে কেন সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো। গ্যাস্ট্রো ইজো ফ্যাকাল রিফ্লেক্স ডিজিজ বা সংক্ষেপে গার্ড কে এই রোগের প্রধান কারণ হিসাবে দায়ী করা হয়ে থাকে। কিছু তরল পদার্থ মাঝে মধ্যে পাকস্থলী থেকে গলনালী দিয়ে মুখে চলে আসে। অর্থাৎ উল্টো পথে ধাবিত হতে থাকে। একেই গ্যাস্ট্রো ইজো ফ্যাকাল রিফ্লেক্স বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের  দীর্ঘদিনের গবেষণায় বুক জ্বালাপোড়া করে কেন এর কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। চলুন এর কিছু কারণ গুলো দেখে আসি।

  • বেশি পরিমাণে তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া।
  • বুক জ্বালাপোড়া করার অন্যতম আরও একটা কারণ হচ্ছে ধূমপান করা।
  • অ্যালকোহল কিংবা মদ্যপান করা।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় কফি বা চা ইত্যাদি পান করলে।
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা গ্রস্থ থাকলেও অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়া করে।
  • কালো গোল মরিচ ও সিরকা যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে।
  • পিত্তথলিতে পাথর থাকার কারণে ও বুক জ্বালাপোড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • কমলার রস, টমেটোর সস, আচার, পেঁয়াজ ইত্যাদি খাবার ও অনেক সময় বুক জ্বালা পড়ার কারণ হয়ে থাকে।

বুক জ্বালাপোড়ার লক্ষণ সমূহ

বুক জ্বালাপোড়া অনেকেরই প্রায় হয়ে থাকে। তবে আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনার বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা হয়েছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কিছু বুক জ্বালাপোড়া লক্ষণ সমূহ তুলে ধরেছি। যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার জ্বালাপোড়ার সমস্যা ভুগছেন।
  • পেটের উপরের দিকে হালকা মৃদু ব্যথা হলে বুক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।
  • বুক ব্যথার সাথে জ্বালা ভাব থাকা।
  • কারো কারো খালি পেটে থাকলে বুক জ্বালা পোড়া করে আবার কারো খাবার গ্রহণ করার পরে হয়ে থাকে।
  • বুক জ্বালাপোড়া হবার সাথে সাথে ঢেকুর ও উঠতে পারে।
  • বিশ্রামের সময় ব্যথা ও বুক জ্বালাপোড়ার বৃদ্ধি হতে পারে। শুয়ে থাকা অবস্থায় কিংবা আধো শোয়া অবস্থায় এসিড খাদ্যনালী দিয়ে উপরের দিকে উঠে আসার ফলে বুক জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে।
  • পাকস্থলীর এসিড সম্প্রসারিত হয়ে খাদ্যনালির ওপর পর্যন্ত চলে আসার কারণে ও বুক ব্যাথা ও জ্বালা হতে পারে।
  • বুক জ্বালাপোড়ার কারণে মুখে তিতা স্বাদ অনুভূত হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সকালের দিকে এমনটা বেশি ঘটে থাকে।
  • স্বড়ভঙ্গ বুক জ্বালাপোড়ার অস্বাভাবিক একটা লক্ষণ। অম্ল বা এসিড পাকস্থলী থেকে কলা পর্যন্ত উঠে আসার ফলে এমনটা হতে পারে।
  • বুক জ্বলার সাথে বমি বমি ভাব কিংবা বমিও হতে পারে।

বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধের উপায়

প্রচলিত একটা কথা আছে যে, Prevention is better then cure অর্থাৎ রোগ হবার আগেই সচেতনতা অবলম্বন করা ভালো। তবে অবস্থা যদি খারাপ হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও ওষুধ ব্যতীত বুক জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা দরকার। চলুন সেই নিয়মগুলো সম্পর্কে জেনে জেনে নি।
  • যে খাবার গুলো বা পানীয় গুলো পান করার ফলে বুকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়, সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে চকলেট, পেঁয়াজ, রসুন, লেবু, কমলালেবু, টমেটো, চা কিংবা কোমল পানীয় জাতীয়।
  • ভাজা মাংসের পরিবর্তে সেকা অথবা ঝলছানো মাংস খাওয়া, মসলা যুক্ত ও তেল চর্বি যুক্ত খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করা।
  • অধিক পরিমাণ খাওয়ার একসাথে না খেয়ে কিছুক্ষণ পরপর একটু একটু করে খাওয়া। এর ফলে দ্রুত খাবার হজম হবে এবং পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে এসিড ও গ্যাস উৎপন্ন হবে না।
  • ঘুমানোর সময় মাথাকে বিছানা থেকে চার থেকে ছয় ইঞ্চি উঁচুতে রেখে ঘুমাতে হবে।
  • ধূমপান অবশ্যই বর্জন করা জরুরি।
  • শরীরের বাড়তি ওজন থাকলে সেটাকে কমে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
  • মোটা বেল্টের প্যান্ট না পড়ে ঢিলা ঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।
  • অবশ্যই দুশ্চিন্তা মুক্ত ও মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

শেষ কথাঃ বুক জ্বালাপোড়া করে কেন

বুক জ্বালাপোড়া করে কেন বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধের উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। বুক জ্বালাপোড়া করে কেন সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।

আজ আর নয়, বুক জ্বালাপোড়া করে কেন সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই বুক জ্বালাপোড়া করে কেন সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url