রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
সূচিপত্রঃ রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
- রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
- যাদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করা যাবে না
- কতদিন পরপর রক্ত দেওয়া যাবে
- রক্ত সংগ্রহের আগে প্রয়োজনীয় নিয়ম
- শেষ কথাঃ রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
আমাদের নিজেদের দেহের রক্ত অনেক সময় আমাদের জন্য যথেষ্ট হয় না। তখন অন্য কারো কাছে রক্ত নেবার প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই অন্য কাউকে রক্তদাতা বলা হয়ে থাকে। তবে যে কোন রক্তদাতার কাছ থেকেই রক্ত নেওয়া উচিত না। অন্যের কাছ থেকে রক্ত নেবার আগে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনার মধ্যে রাখা উচিত। তাই আজকে আমরা রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। যখন আমরা প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে রক্ত নেব তখন যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা নিচে দেওয়া হল-
আরো পড়ুনঃ ভাষা শহীদদের নিয়ে ১৫টি উক্তি
- রক্তদাতা তার শরীর স্বাস্থ্য অবশ্যই ভালো হতে হবে।
- রক্তদাতা বিনামূল্যে যেন রক্ত দান করে। রক্তদান করার বিনিময়ে টাকা চাইলে সেই রক্তদাতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
- রক্তদাতা বয়স বিবেচনায় রাখা উচিত। তার বয়স যেন ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- একজন রক্তদাতা বছরে সাধারণত ২-৩ বার রক্তদান করতে পারবেন। ঘন ঘন রক্তদান করা উচিত নয়।
- শিশু এবং মহিলার কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
- রক্ত সংগ্রহের আগে পুরুষের দেহে হিমোগ্লোবিন ১৩.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার থাকতে হবে এবং স্ত্রীদের দেহে ১২.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার থাকতে হবে।
- রক্তদান করা যাবে শরীরের মোট রক্তের ১৩%।
যাদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করা যাবে না
আজকের পোস্টে আমরা রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা দেখব যাদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করা যাবে না তারা কারা-
- মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- যারা হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগে আক্রান্ত।
- যারা হিমেফেলিয়াতে ভুগছেন।
- ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত নেয়া যাবে না।
- যাদের অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট রয়েছে অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ যেমন, হাঁপানি, এজমা যাদের রয়েছে।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী অবস্থায়, মাসিক চলাকালীন সময় এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার এক বছর পর পর্যন্ত রক্ত দেয়া তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
- যাদের এইচআইভি পজিটিভ অর্থাৎ এইডস রয়েছে।
- গত দুই মাসে যাদের ওজন ৪ কেজি কমে গেছে।
- যারা ছয় মাসের ভেতর বড় কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কিংবা অপারেশন হয়েছে।
কতদিন পরপর রক্ত দেওয়া যাবে
আমরা এখন জানবো কতদিন পর পর রক্ত দেওয়া যাবে সে বিষয়ে। আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর রক্তের কোষ গুলো মারা গিয়ে আবার নতুন করে তৈরি হয়ে থাকে। সেজন্য একবার রক্তদান করবার পরে শরীরে যে পরিমাণ কোষের ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে সেগুলোর পূরণ হতে প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। যার কারণে একজন রক্তদাতার রক্ত দান করা উচিত চার মাস পর পর। রক্তের কোষগুলো পরিপক্ক হবার আগেই রক্তদান করলে রক্তদাতা শরীরে যে রকম কোষের ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে ঠিক তেমনি পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তের উপাদান রক্ত গ্রহীতা ও পায় না।
ফলে রোগীর শরীরে অপরিপক্ক রক্ত ১০০% উপকারে আসে না। সেজন্য দ্রুত আরও রক্ত রোগীকে নিতে হয়। এতে করে অর্থের ও অপচয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ চার মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই রক্ত দিলে রোগী এক ব্যাগ রক্ত ঠিকই পাই কিন্তু রোগীর পুরোপুরি উপকার হয় না। উপরন্তু এটা রক্তদাতা ক্ষেত্রেও ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তিন মাস পর ঘনঘনো কিংবা নিয়মিত তিন মাস পর বা তিন মাসের কম সময়ে রক্ত দিলে রক্তদাতা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি স্থায়ীভাবে রক্তদাতা রক্তদানে অক্ষম হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। ব্যাঘাত ঘটলে রক্তদাতা নিজেও একজন রক্তশূন্যতার রোগী হয়ে যেতে পারেন।
তখন উল্টো তার নিজেরই রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন পরতে পারে। তাই রক্তদান নিয়ম মেনে হোক। আমাদের দেশে এমনিতেই রক্তদাতা কম। রক্তদান করতে অনেকেই চাই না আবার অনেকে ভয় পায়। রক্তদাতা অনিয়ম করে রক্তদান তারপর অসুস্থ হলে রক্তদানের দেখাদেখি অন্যরা উৎসাহিত না হয়ে বরং রক্তদান থেকে অনেকে ভয় পিছিয়ে যাবে। সেজন্য একজন ডোনারের নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ১২০ দিন পর পর অর্থাৎ চার মাস পর রক্তদান করা উচিত। এতে করে রোগী ও রক্তদাতা উভয়ের জন্য মঙ্গল।
রক্ত সংগ্রহের আগে প্রয়োজনীয় নিয়ম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুসারে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সকল মানুষই নিজ ইচ্ছায় রক্ত দিতে পারবেন। তবে কিছু শর্তাবলী আছে যার কারণে নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য রক্ত দান করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিয়ম জানা জরুরী। রক্তে থাকে প্লেটলেট, রক্ত কণিকা ও প্লাজমা। চিকিৎসকরা জানাই, এই তিনটা জিনিসই এক ইউনিট রক্ত থেকে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, কমপক্ষে তিনজন মানুষের জীবন এক ইউনিট রক্ত রক্ষা করতে পারে। চাইলে কোন রক্তদাতা হোল ব্লাড বা সমগ্র রক্ত ও দিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ রক্ত দিলে কি রোজা ভেঙ্গে যায় কি না জেনে নিন বিস্তারিত
কিংবা রক্তের বিশেষ উপাদান অর্থাৎ প্লেটলেট ও দান করতে পারবেন। মানব দেহের মোট ওজনের শতকরা সাত ভাগ থাকে রক্ত। সাধারণত একজনের দেহ থেকে একবারে এক ইউনিট করে রক্ত নেয়া হয়ে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই রক্তদাতার দেহে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। শুধু এটাই নয়, এর ফলে রক্তদাতার কোন ধরনের ক্ষতি হয় না। তবে চাইলেই যে কেউ রক্ত দিতে পারবে না। এছাড়াও যদি রক্তের গ্রুপ ভুল হয়ে যায় তাহলে শারীরিক গুরুতর সমস্যা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই রক্ত দেওয়ার আগে কি কি নিয়ম মানতে হবে সেগুলো জেনে নেয়া আবশ্যক।
শেষ কথাঃ রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় কতদিন পরপর রক্ত দেওয়া যাবে বা যাদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করা যাবে না সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
আজ আর নয়, রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই রক্ত সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬
