শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত

আপনারা কি শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত বা কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমানে খাবেন সে সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। কোন কোন খাবারে শর্করা থাকে সেগুলো বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার। আজকে আমরা আলোচনা করব বেশী পরিমানে শর্করা খাবার আগে যা ভাববেন ও শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই, শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত

শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের মূল চালিকাশক্তি হল খাদ্য। দেহের বিভিন্ন চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। শর্করা, ভিটামিন, আমিষ, চর্বি, খনিজ লবণ ও পানি দেহ গঠন থেকে শুরু করে কর্মশক্তি প্রদান, ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন সহ বিভিন্ন কাজে খাদ্যের এই ছয়টা উপাদান যুক্ত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শর্করা জাতীয় খাবার মানুষের খাদ্য গ্রহণের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ থাকে। তাই আজকে আমরা জানব শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে।

আরো পড়ুনঃ রোজা রেখে রমজান মাসে ওজন কমানোর ০৭ উপায়

শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সেটা জেনে নিয়ে আপনার খাদ্য তালিকা সে অনুসারে করা উচিত। আমেরিকান একটা খাদ্য তালিকা অনুসারে আপনার প্রতিদিন ক্যালরি গ্রহণ করার ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ শর্করা হওয়া দরকার। দিনে একজন ব্যক্তির জন্য মোট ২০০০ ক্যালরি গ্রহণ করার মধ্যে শর্করা থাকতে হবে ৯০০ থেকে ১৩০০ ক্যালোরি। অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা ও বি এম আই এর উপরে ভিত্তি করে আপনার শর্করা গ্রহনের পরিমাণ পরিবর্তিত হবে।

কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমানে খাবেন

শর্করা জাতীয় খাবার এড়ানো অত সহজ না। যার মধ্যে রয়েছে চিনি, আঁশ এবং শ্বেতসার। যা আপনি দুগ্ধ, ফল সবজি বা শস্যর মধ্যেও পেতে পারেন। কিন্তু ইদানিং শর্করাকে অনেকটাই ভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে যে সকল খাবার শরীর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খেতে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্যে খুব কমই শর্করা অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য এখনো খানিকটা শর্করা গ্রহণ করাই লাগবে, কেননা শর্করা হলো খাদ্যের মৌলিক উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম। কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমানে খাবেন সে বিষয়ে জেনে নেওয়া দরকার।

এটা পরিমাপ করবার জন্য সহজ এবং দ্রুত একটা পরীক্ষা আছে। একটা সাধারণ বিস্কুট চাবানো শুরু করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বুঝতে না পারবেন যে এটার স্বাদ পাল্টে যাচ্ছে। এটা সাধারণত কিছুটা মিষ্টি লাগতে শুরু করে, কিন্তু হয়তো আপনি অন্য স্বাদ গুলো ও বুঝতে পারবেন। এই স্বাদ পরিবর্তনের ঘটনাটি যদি ৩০ সেকেন্ডের ভেতরে ঘটে, তাহলে শর্করা পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করছেন। যদি এই স্বাদ ১৫ সেকেন্ডের ভেতরে ঘটে, সেক্ষেত্রে আরও অনেক ভালো। কিন্তু ৩০ সেকেন্ড পরেও যদি বিস্কুটের স্বাদের কোন পরিবর্তন বুঝতে না পারেন সে ক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাবার আপনার আরো কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ লিচু খাওয়ার ৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

কেননা, সঠিকভাবে আপনার শরীর শর্করার প্রক্রিয়া করতে পারেনা। এটা হয়তোবা আপনার ওজন বাড়ানো ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য হতে পারে। ডক্টর শ্যারন মোলেম এই পরীক্ষার নকশা করেছেন। এমন কিছু উপাদান আমাদের জিহ্বায় রয়েছে যা শ্বেতসার গুলোকে ক্ষুদ্র গ্লুকোজে বা চিনিতে রূপান্তরিত করে থাকে। সেজন্যই একসময় বিস্কুটটি মিষ্টি লাগতে শুরু করে। বিস্কুট দ্রুত মিষ্টি লাগার মানে আপনার শরীরে শর্করা কম থাকায় এনজাইম দ্রুত তৈরি হচ্ছে।

বেশী পরিমানে শর্করা খাবার আগে যা ভাববেন

শর্করা হচ্ছে আমাদের সারাদিনের খাবার তালিকার মধ্যে অন্যতম উপাদান। তার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভাত। যা কিছুই খায় না কেন ভাত না খেলে যেন তৃপ্তি আসে না। একদিন কিংবা এক বেলা ভাত না খাবার কথা চিন্তা ও করতে পারিনা আমরা। দৈনিক দুই বেলা, কখনো কখনো আবার তিন বেলাতেই ভাত খেয়ে থাকি। অনেকে আবার স্যান্ডউইচ, বার্গার ও পিৎজা ছাড়া নিজেকে কল্পনাই করেনা। পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা অনেক সময় কোল্ড ড্রিংকস পানের কারণে ভুলেই যাই।

পিৎজা, বার্গার, ভাত, স্যান্ডউইচ ও কোল্ড্রিংস এসবগুলো হচ্ছে শর্করা জাতীয় খাবারের এক একটা রূপ। তাই বেশি পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবারের কারণে কত ধরনের সমস্যা আমাদের শরীরে হচ্ছে তার কোন কিছুই আমরা জানি না। আমাদের শরীরে অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবারের জন্য রক্তশূন্যতা হতে পারে সেটা কি আমরা জানি? নিশ্চয় অনেক অবাক হচ্ছেন। আপনার খাদ্যে আয়রনের ঘাটতি হয়তো বা নাই। কিন্তু শর্করা দিয়ে আপনার খাবার ভরপুর। উচ্চমাত্রায় ফাইটিক অ্যাসিড ও ফসফেট রয়েছে শর্করা জাতীয় খাবার।

আরো পড়ুনঃ আদা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা

শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে খাদ্যনালীতে যাবার পর খাবারে থাকা আয়রনের সাথে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তৈরি করে আয়রন ফসফেট এবং ফাইটেট, পানিতে যা অদ্রবনীয়। খাদ্য নালী থেকে শোষিত হয়ে এই আয়রন ফসফেট ও ফাইটেট রক্তে যেতে পারেন না। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হয়তো আপনি হয়তো খাচ্ছেন বা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ওষুধ খাচ্ছেন। কিন্তু কতটুকু আপনার খাবারের আয়রন রক্তে পৌঁছাচ্ছে সেটা বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নির্ভর করে থাকে। এর ভিতর অন্যতম হচ্ছে আপনার খাবার তালিকায় শর্করার পরিমাণ কতটুকু কিংবা আপনার খাদ্য অভ্যাস কিরূপ।

রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করার জন্য জরুরি উপাদান হচ্ছে আয়রন। হিমোগ্লোবিন তৈরিতে বাধাপ্রাপ্ত হবে যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণ আয়রন না থাকে। ফলে দেখা দিয়ে থাকে রক্তশূন্যতা। আমাদের দেশে রক্তশূন্যতা বেশি মেয়েদের। প্রথমত খাদ্যভ্যাসের সমস্যা তো রয়েছেই তার ওপর প্রতিমাসে যদি ঋতুস্রাব, বাচ্চাকে দুগ্ধ পান, গর্ভধারণ ইত্যাদি কারণে আয়রন শরীর থেকে বের হয়ে যায় তাহলে রক্তশূন্যতা তো হবেই। তাই শুধু মাত্র আয়রনযুক্ত খাবার কিংবা আয়রন ট্যাবলেট খেলে হবে না। শর্করার পরিমাণ ও ঠিক রাখতে হবে, যেন আয়রনকে শর্করা শোষণ করে না নিতে পারে।

কোন কোন খাবারে শর্করা থাকে

প্রায় খাবারেই মূলত কম বেশি শর্করা থাকে। এখন আমরা কোন কোন খাবারে শর্করা থাকে সেগুলো দেখব।

  • ভুট্টা।
  • গাজর।
  • মিষ্টি আলু।
  • কুমড়া।
  • বিট।
  • মটরশুঁটি।
  • আলু।
  • মসুর ডাল।
  • পুঁইশাক।
  • লাল চাল।
  • ওটস।
  • রাজমা।
  • কাউন।
  • ছোলা।
  • দুধ।
  • আনারস।
  • কলা।
  • আম।
  • কিসমিস।
  • আপেল।
  • খেজুর।

শেষ কথাঃ শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত

শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমানে খাবেন সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি পড়ুন। শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

আজ আর নয়, শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই শর্করা জাতীয় খাবার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url