কোরআন না পড়ার শাস্তি - কোরআন না পড়লে কি হয়

 আপনারা কি কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় ও কুরআন পড়ার গুরুত্ব এবং বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। আজকে আমরা আলোচনা করব শিক্ষক নিয়ে কোরআনের আয়াত, কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় এবং কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত সম্পর্কে।

তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই, কোরআন না পড়লে কি হয় এবং কোরআন না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ কোরআন না পড়ার শাস্তি - কোরআন না পড়লে কি হয়

কোরআন না পড়ার শাস্তি

কুরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান, এবং মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক। এটা এমন একটা অমূল্য সম্পদ যে এটা পড়লেও সাওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহর কিতাবের একটা হরফ যে ব্যাক্তি পড়বে সে একটা নেকি পেয়ে যাবে। আর প্রত্যেকটি নেকি হচ্ছে ১০ গুণের সমান। আমরা বলে থাকি যে, ' আলিফ লাম মিম' হচ্ছে একটা হরফ। কিন্তু না, আলিফ হচ্ছে একটা হরফ, লাম হচ্ছে একটা হরফ এবং মিম হচ্ছে একটা হরফ। (তিরমিজিঃ ২৯১০)। পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছেন, ' আপনার প্রতি আমি এই বরকত পূর্ণ কিতাব নাযিল করেছি, এই আয়াতগুলো যেন তারা অনুধাবন করেন এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে' (সূরা সোয়াদঃ ২৯)।

' কুরআন নিয়ে তারা কি চিন্তা করে না? নাকি অন্তঃকরণ তাদের বন্ধ?' (সূরা মুহাম্মদঃ ০৪)। অন্য আয়াতে এসেছেন, আমি কোরআনকে সহজ করেছি উপদেশ গ্রহণ করার জন্য। অর্থাৎ চিন্তা করবে এমন কেউ কি আছে? (সূরা কামারঃ ১৭)। অতএব, উপরক্ত আয়াতসমিলের অর্থ এটা নয় যে, না বুঝিয়ে কোরআন পড়লে সাওয়াব পাবেনা। বরং কোরআন না পড়ার শাস্তি আছে। কোরআন না পড়লে কি হয় কিংবা কোরআন না পড়ার শাস্তির বিষয়ে তুলে ধরবো। কেননা, কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে একটা স্বতন্ত্র ইবাদত। কোরআন না বুঝে পড়লে কোন গুনাহ হবে না।

আরো পড়ুনঃ রোজার ইবাদতের ফজিলত

কিন্তু আপনি কুরআন না বুঝে তেলাওয়াত করলে সারা জীবন অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে যার মধ্যে কোরআনের কোন ধরনের অংশ নাই অর্থাৎ কোরআন সম্পর্কে যে ব্যক্তি অজ্ঞ কিংবা কোরআনের শুদ্ধ তেলাওয়াত শিখেনি, সেই ব্যক্তিকে অনবরত পতিত ঘরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোরআন না পড়ার শাস্তি হচ্ছে অনবরত পতিতা ঘর। যে বিরান ঘরে কিংবা পতিত ভূমি কারো উপকারে কখনো আসে না বরং অন্যের ক্ষতি ও বিপদের কারণ হয়ে থাকে। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত না করার ফলে সাওয়াবের পরিবর্তে আরো গুনাগার হয়ে থাকে

কোরআন না পড়লে কি হয়

বিশ্ব মানবতার জীবনকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করবার জন্য আল কোরআন এসেছেন। সত্যের সন্ধান দেবার জন্য, আলোর দিকে অন্ধকার থেকে বের করে আনার জন্য। তবে যে ব্যক্তি কোরআন না পড়লে কি হয় বা কোরআন না পড়বে, কোরআনকে বুঝার চেষ্টা না করবে, কোরআনকে নিয়ে গবেষণা করবে না হঠাৎ যে ব্যক্তির দেহের মধ্যে আল কুরআনের আলো নাই, কোরআন না পড়ার শাস্তি স্বরূপ সেই ব্যক্তি হচ্ছে উজাড় বাড়ির মতন, ছাড়া বাড়ির মতন। একটি ছাড়া বাড়িতে যে রকম তেলাপোকা, বিচ্ছু, সাপ ইত্যাদি পোকামাকড় বাস করে থাকে। ঠিক সেরকমই যে দেহের মধ্যে কুরআন নাই সেই দেহের মধ্যে বসবাস করে শয়তান। এর সমর্থনে আল হাদিসের বর্ণিত হয়েছেন,

ان الذي لا يصنع فيه عن بني ابا شي قال فلا رسول الله صلى الله عليه وسلم جو فيه شيء من الافر نكا قالوا بيا اقرب

' হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসুল সাঃ বলেন, আল কুরআনের কোন শিক্ষা যে দেহের মধ্যে নাই সেই দেহটা হলো উজাড় বাড়ির মত'। (সুনান আত- তিরমিজি)। সেজন্য একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল, জীবনের সব কাজের মধ্যে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আল কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করা। তাহলেই নিজেকে শয়তান থেকে রক্ষা করা যাবে।

কুরআন পড়ার গুরুত্ব

নবী রাসুলদেরকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, সমাজের ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে। আর একমাত্র আল কোরআনই হলো সেই ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার মানদ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لقد ارسلنا رسولنا بيناتي وانذر لونا معهما كتابه وميزانا ليقومه بيوقفتي

নিশ্চয়ই স্পষ্ট প্রমাণাদি সহ আমি আমার রাসূলদের কে পাঠিয়েছি এবং কিতাব এবং (ন্যায়ের) মানদ তাদের সাথে নাযিল করেছি, মানুষ যাতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে থাকে। (সূরা হাদিদ, আয়াতঃ ২৫)। কুরআন পড়ার গুরুত্ব অনেক। কিতাবসমূহের মধ্যে আল কুরআনই হচ্ছে সত্য যার মধ্যে কোন সন্দেহ নাই। আল্লাহ বলেছেন, 

جارك الكتاب لا ريب فيه هدى للمتقين 

এটা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। এটাতে কোন ধরনের সন্দেহ নাই। হেদায়াত-মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা আল বাকারা, আয়াতঃ ২)

আরো পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরের তারিখ

সেজন্য সত্য কথা বলতে চাইলে, নেক আমল করতে চাইলে, ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আল কুরআন পড়ার গুরুত্ব জানতে হবে। কোরআন না পড়ার শাস্তি কি এবং কোরআন না পড়লে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে হবে। আল কুরআন সম্পর্কে বুঝতে হবে। আল কোরআন কে মেনে চলতে হবে। বিচার ফায়সালা আল কুরআনের মাধ্যমে করতে হবে। উত্তম প্রতিদান তাহলেই পাওয়া সম্ভব হবে। অর্থাৎ মানব জীবনে কুরআন পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার ঘটনা

রাসূল সাঃ বলেছেন, কোরআন যে ব্যক্তি শিক্ষা করবে, পাঠ করবে এবং সে অনুসারে আমল করবে দুটি পোশাক তার বাবা মাকে পড়ানো হবে যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চাইতে অনেক অনেক মূল্যবান হবে। তারা তখন বলবেন, আমাদের কোন আমলের কারণে এত মূল্যবান পোশাক পড়ানো হচ্ছে? উত্তরে বলবেন, বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার ঘটনা যা তারা তাদের সন্তানদের শিখিয়েছেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোরআন এবং সিয়াম এর জন্য আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবেন।

কুরআন পড়া এবং কুরআন শিক্ষা দেয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা সবচাইতে উত্তম সম্পদ অর্জন করবার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বলেন, তোমাদের মধ্যে সকালে মসজিদে গিয়ে কেন কেউ আল্লাহর কুরআন থেকে দুইটা আয়াত পড়ে না কিংবা শিক্ষা দেয় না? তাহলে তার জন্য সেটা দুইটা ওর লাভ করার চাইতেও উত্তম হবে। তিনটা আয়াত হবে তিনটা উট অপেক্ষা উত্তম। চারটা আয়াত হবে চারটা উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা ও হবে অনুরূপ আয়াত অপেক্ষা উত্তম।

শিক্ষক নিয়ে কোরআনের আয়াত| কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত

শিক্ষকদের মর্যাদা এবং গুরুত্ব এমনিতেই অতুলনীয় হয়ে থাকে। আর সেই শিক্ষা যদি হয়ে থাকে ইসলাম এবং দ্বীনের, পরকাল ও আল্লাহর তাহলে সেই শিক্ষক তো সোনাই সোহগা। শিক্ষকের মর্যাদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষক নিয়ে কোরআনের আয়াত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন-

ان الله وملائكته واهلا سماوتي والارضين حتى نماله في وحتى لايف الو نا على مقلي نشي د خير

সন্দেহ নাই, মানুষকে যিনি কল্যাণের শিক্ষা দিয়ে থাকেন, রহমত তার ওপর বর্ষিত করেন। তার আকাশ সমূহ, ফেরেশতাকুল এবং পৃথিবীর অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের মধ্যে থাকা পিঁপড়া গুলো এবং মাছগুলো এই ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকে। (জামে তিরমিজি, হাদিসঃ ২৬৮৫)। এটাই হচ্ছে কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত।

আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

আর এই শিক্ষক যদি সরাসরি কোরআনের শিক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে তার কোরআনের ছোঁয়া যেখানে যেখানে লেগেছে, সেগুলোই শ্রেষ্ঠত্ব এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুপম হয়ে আছেন। কোরআন নাজিলের মাস হচ্ছে রমজান মাস। মর্যাদার এই মাসের সাথে অন্য কোন মাসের তুলনা করা চলে না। লাইলাতুল কদরে কুরআন নাযিল হয়েছে। আর পবিত্র কোরানেই এই এক রাতকে ঘোষণা করা হয়েছে হাজার মাসের চাইতেও শ্রেষ্ঠ রাত বলে। ঠিক তেমনি কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যিনি, তিনি অন্যান্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হতে পারেন।

শেষ কথাঃ কোরআন না পড়ার শাস্তি - কোরআন না পড়লে কি হয়

কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি পড়ুন। কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

আজ আর নয়, কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই কোরআন না পড়ার শাস্তি বা কোরআন না পড়লে কি হয় সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url