মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
আপনারা মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ বা বিয়ে করা কি বাধ্যতামূলক ও বিয়ে করা সুন্নত সে সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। আজকে আমরা আলোচনা করব মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ বা বিয়ে ফরজ কেনএবং পালিয়ে বিয়ে করা কি জায়েজ নাকি সে সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
- মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
- বিয়ে করা সুন্নত
- বিয়ে করা কি ওয়াজিব
- পালিয়ে বিয়ে করা কি জায়েজ
- বিয়ে করা কি বাধ্যতামূলক
- শেষ কথাঃ মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ| বিয়ে ফরজ কেন
এখন আমরা এই পোষ্টের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ সে বিষয়ে আলোচনা করব। ক্ষেত্রবিশেষে বিয়ে করা ওয়াজিব, সুন্নত, ফরজ, মাকরুহ, মোস্তাহাব, এরপর হচ্ছে হারাম। বিয়ের মধ্যে সব বিধান প্রযোজ্য হয়। সকল ওলামায়ে কেরামের মতানুসারে, এটি একটি অনুমোদিত পদ্ধতি। এটা ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এটা ফরজ, কারো জন্য আবার এটা হারাম ও হতে পারে। স্পষ্ট করে রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি শারীরিক সামর্থ্য এবং আর্থিক সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে।
আরো পড়ুনঃ শাবান মাসের রোজা কয়টি
শারীরিক সামর্থের জন্য যদি কেউ মনে করে থাকে যে, তার ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে সে ব্যক্তির উপরে বিয়ে করা বাধ্যতামূলক বা ফরজ হয়ে যায়। আবার যদি এমন হয়ে থাকে যে, তার শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে, কিন্তু নিজেকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে তার ওপর বিয়ে সুন্নাহ। আরেকটা হল, শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু রাসূল (সাঃ) ও বিভিন্নভাবে অন্যান্য নির্দেশনার মাধ্যমে তিনি ইবাদতের মধ্য দিয়ে যদি নিজেকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে তার জন্য বিয়ে মুস্তাহাব। অন্যদিকে কারো যদি আর্থিক সামর্থ্য বা শারীরিক সামর্থ্য না থেকে থাকে, শুধুমাত্র প্রবৃত্তির অনুসরণ করবার জন্য বিয়ে করে থাকে তাহলে এটা তিনি হারাম কাজ করলেন।
বিয়ে করা সুন্নত| বিয়ে করা কি ফরজ
বিয়ে করা সুন্নত সম্পর্কে আমরা এখন কিছু আলোচনা করব। নারী-পুরুষের মধ্যে বর্তমান যুগে যে পরিমাণ ব্যভিচার ও জিনার মত বড় বড় গুনাহ হয়ে চলেছে, বিয়ে হলে এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। বিয়ে করলে চরিত্রের নৈতিক উন্নতি ঘটে থাকে, বংশ পরম্পরায় থাকে অব্যাহত এবং সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে বিয়ে করলে মানসিকভাবে মন ও দেহ সুস্থ থাকে।
রাসুল সাঃ এর মতে- " বিয়ে হচ্ছে আমার সুন্নাত, আমার সুন্নত তরিকায় যে ব্যক্তি ছেড়ে চলবে আমার দলভুক্ত সে ব্যক্তি নয়"(বুখারী)।
রাসুল সাঃ অন্য হাদিসে বলেছেন- ' হে যুবসমাজ! তোমাদের মাঝে বিয়ের সমর্থ্য যারা রাখে, বিয়ে করা তাদের কর্তব্য, কেননা বিয়ে হচ্ছে যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী'(মিশকাত)।
আরো পড়ুনঃ শাবান মাসের ফজিলত
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রথমত সাবালক হয়ে থাকলে বিয়ে করা সুন্নত। শারীরিক চাহিদা যদি প্রবল না থাকে, কিন্তু স্ত্রীর অধিকার আদায় করার সামর্থ্য থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিয়ে করা সুন্নত। তবে এমতাবস্থায় যদি খারাপ কাজ যেমন ব্যভিচারের প্রতি ঝোঁকার আশঙ্কা না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে বিয়ে না করলেও কোন ধরনের অসুবিধা নাই। তখন বিয়ে করা ফরজ হয়ে যায়, যখন বিয়ে না করলে গুনাহ হবার সম্ভাবনা থেকে থাকে। যদি যথেষ্ট সামর্থ্য থাকার সাথে সাথে শারীরিক চাহিদা এত বেশি পরিমাণে থাকে যে, বিয়ে না করলে ব্যভিচার, জিনা বা খারাপ কাজে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে বিয়ে করা ফরজ হয়ে যায়।
বিয়ে করা কি ওয়াজিব| মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
অনেকের মনে বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠে আসে। সে ক্ষেত্রে অনেকে প্রশ্ন করে থাকে বিয়ে করা কি ওয়াজিব বা মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ এসব বিষয়ে। এখন আপনাদের জানাবো বিয়ে করা কখন ওয়াজিব হয়। বিয়ে করা ওয়াজিব হয় তখন যখন শারীরিক চাহিদা থেকে থাকে এবং স্ত্রীর প্রতিদিনের খরচ বহন করার মত সামর্থ্য থেকে থাকে। বিয়ে করা তখন ওয়াজিব হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বিয়ে করা থেকে বিরত থাকলে সেই ব্যক্তি গুনাগার হবে।
পালিয়ে বিয়ে করা কি জায়েজ| মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সেক্ষেত্রে পারিবারিক মূল্যবোধের স্থান থেকে বিয়ে করা বংশীয় মর্যাদা ও পরিবারের সদস্যদের অভিমত অনেক জরুরী। তাই অভিভাবকদের এ বিষয়ে কিছু অধিকার আছে। কেননা, কখনো কখনো অভিভাবকহীন বিয়েতে দেখা যায়- কুফু বা সমতা রক্ষা হয়ে থাকে না। আর বংশের অপমান সেক্ষেত্রে হয়ে থাকে। শরীয়ত অনুযায়ী অভিভাবকের অভিমত বিয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে একটা হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অভিভাবক বিহীন বিয়ে সংঘটিত হতে পারে না। (তিরমিজি, হাদিসঃ ১১০১; আবু দাউদ, হাদিসঃ ২০৮৩)। আর গোপন বিয়ে বা অভিভাবকহীন বিয়ে অকৃতজ্ঞতা পূর্ণ ও অসামাজিক কাজ করে থাকে। সেজন্য ইসলাম বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা পছন্দ করেন না। এছাড়াও বহু বিপত্তি গোপন বিয়েতে রয়েছে। সেজন্য ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, ' বিয়ে করবে - ঘোষণা দিয়ে'।(মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ ৪/৫)।
বিয়ে করা কি বাধ্যতামূলক| মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
চলুন দেখি নি বিয়ের ব্যাপারে হাদিসে কি বলা হয়েছে। বিয়ের অধ্যায়ে বুখারী শরীফে নবীজি সাঃ বলেছেন, 'হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে বিয়ের সমর্থ্য যে রাখে সে বিয়ে করে যেন নেয়। কেননা, বিয়ের যৌনাঙ্গ কে অধিকতর সংযত এবং দৃষ্টিকে অধিকতর আন্ত রাখে'। ইবনে কাসির তৃতীয় খন্ড ৩৮৩ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন,' অধিক সন্তান প্রসব করি স্ত্রীলোকদের তোমরা বিয়ে কর এবং বংশবৃদ্ধি কর। তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে কেয়ামতের দিন অন্যান্যদের উপর গৌরব করব'। এরকম একই কথা উল্লেখ রয়েছে মিশকাত শরীফঃ কিতাব নিকাহ তে।
বিয়ে প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফে বলা হয়, ' মানুষ বহু রকম অনিষ্ট থেকে বিয়ে করলে বেঁচে যায়। বরং যদি কেউ স্বীয় কাম প্রবৃত্তির আঁচল থেকে, পবিত্র থেকে এবং নিষ্কলুষ থেকে দুনিয়া থেকে বিদায় হতে চায় তাহলে এটাই হচ্ছে তার একমাত্র পথ'। যে পাক পবিত্র হতে চায় আল্লাহর সাথে সে যেন বিয়ে করে ভদ্র মহিলাদের। বিবাহ নিয়ে একটা হাদিস মিশকাত শরীফে আছে এরকম, নবীজি সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বিয়ে করল দ্বীনের আধ অংশ সে যেন পূরণ করল। বিবাহ সম্বন্ধে বুখারী শরীফে বলা হয়, নবীজির দৌলতখানাতে একদিন তিনজন লোক এসে উনার পত্নীর কাছে নবীজি সাঃ এর ইবাদতের কথা জানার পর মন্তব্য করলেন, কোথায় আল্লাহর রাসূল যার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন আল্লাহ পাক, আর কোথায় আমরা গুনাহার সমুদ্রে ডুবে রয়েছি।
আরো পড়ুনঃ রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কিনা জেনে নিন
প্রথম লোক তখন বলল - সারারাত আমি নামাজ পড়বো। দ্বিতীয় লোক বললেন - রোজা রাখব আমি সারাদিন। এরপর তৃতীয় লোক বললেন - কোনদিন আমি বিয়ে করবো না, নারীসঙ্গ কে ত্যাগ করে দেবো। এই কথা শোনার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে সবচাইতে বড় মুত্তাকী হচ্ছি আমি। তার পরেও আমি নামাজ আদায় করে থাকি, রোজা রাখি, ইফতার করি, বিয়ে-শাদী করে স্ত্রীর কাছে যাই। যারা আমার এই তরিকাগুলো না মানবে তারা আমার দলভুক্ত নন। অর্থাৎ দেখা যায় যে, ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ইসলামে যে রকম অপরিসীম, সেরকম সামর্থ্য এবং সচ্ছলতা না থাকলে নিষেধ ও করা হয়েছে বিয়ে করা থেকে।
শেষ কথাঃ মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ
মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি পড়ুন। মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
আজ আর নয়, মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই মেয়েদের বিয়ে করা কি ফরজ সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬
